by Md Rashedul Islam
February 13th 2020.

পেটের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণে না-বলে দোকানে ঢুকে বিস্কুট খাওয়ায় শিশুকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে কতিপয় দোকানি। শিশুর প্রতি এমন নির্দয় আচরণে সচেতন মহল বিস্মিত। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, অভাগা শিশুটির বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া। শিশু মাহতাবের মা-বাবা উভয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। ফলে সে পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ জীবন যাপন করছে।

চিকিৎসাধীন মাহতাব জানায়, ক্ষেতখামারে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। ওইদিন ক্ষুধার তাড়নায় দোকানে ঢুকে সে বিস্কুট খেয়েছিল, কোনো কিছু চুরি করেনি। মাহতাব আরো জানায়, রড দিয়ে পিঠানোর পাশাপাশি তার হাতে-পায়ে দোকানি সালেহ বেশ কয়েকটি কামড় দিয়ে মারাত্মক জখম করেছে।

বরগুনার পাথরঘাটায় বিস্কুট খাবার অভিযোগে মাহতাব (১৪) নামের শিশুকে পিটিয়ে জখম করে কয়েকজন দোকানি। পুলিশ মারাত্মক জখম আহতবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছে। পুলিশের এ কাজ স্থানীয় সচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে প্রশংসা পাচ্ছে।

শিশুরা কারো একার সন্তান নয়। তারা সবার কাছে সমান আদর-সোহাগ পাওয়ার অধিকারী। সব সমাজেই শিশুদের প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হয়। শিশুদের যারা আদর-সোহাগ করে না- তাদের সীমার সমতুল্য ভাবা হয়। তাই শিশুর প্রতি সদয় ও মানবিক হওয়া অবশ্য কর্তব্য।

জঠর জ্বালা কী জিনিষ, সেটা কজন বোঝে। ক্ষুধার তাড়না নিবারণে বয়স্ক মানুষরাই কত কী না করে। আর শিশু? সে তো চুরি করে কিছু নিয়ে যায়নি। চেষ্টাও করেনি। কেবল না-বলে কয়টা বিস্কুট খেয়েছে! যদিও না বলে খাওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু বে-আড়া পেট কি তা বোঝে?

দরিদ্রদের পেটের জ্বালা বোঝার জন্য মহান আল্লাহ তার বান্দাদের রমজানের রোজা দিয়েছেন। ক্ষুধার যাতনা কতটা অসহনীয়, সেটা বাস্তবে উপলব্ধির জন্যই রোজা। যদিও রোজাকে শরীরের জাকাত বলা হয়। বেকুব দোকানীরা শিশুটির পেটের কষ্টের দিকটা একবারও ভেবে দেখেনি।

আমাদের সমাজ শিশুর প্রতি কতটা নিষ্ঠুর আচরণ করে, আমরা প্রায়ই সেসব দানবীয় চিত্র দেখতে পাই। মানবীয় আচার-আচরণের পরিবর্তে আমরা যে দানবীয় রূপ ধারণ করে অমানবিক চরিত্র ধারণ করছি, তারই এক ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করে বিস্কুট খেতে যাওয়া শিশু মাহতাব।

শিশুরা নিজের, না পরের; সেটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। শিশুরা সব সময়ই মানুষের কাছে পরম যত্ন ও সমান আদর-সোহাগ পেয়ে আসছে। যে সমাজে নারী ও শিশুদের যত কদর, সে সমাজ ততই উন্নত ও অগ্রসর। আমরা তেমনটা হতে চাই। থাকতে চাই ক্ষুধার্ত মাহতাবদের পাশে।

আমাদের সমাজের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, বরগুনার পাথরঘাটার পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী দোকানী তা নির্দয়ভাবে হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছে। যে বয়সে মাহতাবরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তারা পেটের জ্বালা মিটাতে গিয়ে মারাত্মক জখম হচ্ছে।

আমাদের সমাজটা যদি অসহায়দের মৌলিক অধিকারসহ শিক্ষার দায়িত্ব নিত, তাহলে মাহতাবদের এ বয়সে ক্ষুধার জন্য না বলে অন্যের বিস্কুট খেতে হতো না, শিকার হতে হতো মারাত্মক জখমের। এ ব্যর্থতা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার, যে দায় আমরা মোটেও এড়াতে পারি না।

পরিশেষে মাহতাবের মতো ক্ষুধায় কাতর শিশুটির প্রতি সদয় না হয়ে নির্দয় আচরণকারী দোকানীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত তথা তার এবং তার মতো অন্য শিশুরা ভবিষ্যতে আর যাতে খাবার কষ্টে না ভোগে, এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া সময়ের দাবি।

Search Website

Search

Subscribe

Newsletter

WhatsApp Google Map

Safety and Abuse Reporting

Thanks for being awesome!

We appreciate you contacting us. Our support will get back in touch with you soon!

Have a great day!

Are you sure you want to report abuse against this website?

Please note that your query will be processed only if we find it relevant. Rest all requests will be ignored. If you need help with the website, please login to your dashboard and connect to support